যশোর রূপদিয়া
যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশেই জমজমাট রূপদিয়া বাজার।
0
যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশেই জমজমাট রূপদিয়া বাজার। বাজারের শরীরে এখন নগরায়নের ছোঁয়া। যশোর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের এই জনপদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। আছে নানা ধরনের কিংবদন্তি। ইতিহাসের বিবরণ আছে পাঠ্যপুস্তকে। অতীতের স্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল ভবনের ধ্বংসাবশেষ। কিংবদন্তি আছে লোকমুখে ছড়িয়ে। তাতে কতটা কল্পনার রং চড়ান হয়েছে, তা আজ নির্ণয় করার উপায় নেই।
রূপদিয়া বাজারে প্রবেশের মুখেই বাঁ হাতে ঘন গাছপালা ঘেরা একটি স্থান। কিছুটা ফাঁকা। জংলী লতাপাতায় ঢেকে গেছে চারদিক। আশপাশে কিছু আধুনিক ভবন উঠেছে। ওই লতাপাতা ঢাকা স্থানে পুরনো ভবনের ধ্বংসাবশেষ কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাশ দিয়েই চলে গেছে ভৈরব নদ। উত্তর প্রানত্মের এই নদ পশ্চিম থেকে পূর্বগামী। ভাঙ্গা ভবনের ধার ঘেঁষা নদীর ওপর বাঁধানো সিঁড়ি। স্পষ্ট বোঝা যায়, এটি অতীতে ঘাট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখন ভাঙ্গা ঘাট মূল্যহীন। কেন না, যাঁরা ঘাটটি তৈরি করেছিলেন তাঁরা নেই। নদীটিও ক্ষীণকায়া। বর্ষায় নাব্য পায়। তাছাড়া আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এ এলাকায় নদীর প্রয়োজনও ফুরিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। পুরনো ভবনের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কে স্থানীয় মানুষজন জানেন এটি কুঠিবাড়ি। নীলকুঠি। কিন্তু এর ইতিহাস জানে না অনেকেই। এই ধ্বংসাবশেষই যশোর জেলায় স্থাপিত প্রথম নীলকুঠি। ১৭৯৫ সালে এটি নির্মাণ করেন মি. বন্ড। এই বন্ড সাহেবকে ঘিরে রূপদিয়া এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা কিংবদনত্মি। বাংলাদেশে প্রথম নীলচাষ আরম্ভ করেন ফরাসী বণিক লুই বোনড। ১৭৭৭ সালে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার চন্দননগরের তালডাঙ্গা ও গোন্দলপাড়ায় নীলকুঠি স্থাপন করেন। ক্রমান্বয়ে নীলচাষ ছড়িয়ে পড়ে বাংলার সর্বত্র। তবে যশোর ও নদীয়ার নীল ছিল উৎকৃষ্ট। ১৮১০ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যনত্ম নীলকরদের জন্য পরিস্থিতি ছিল অনুকূলে। সে সময় এদেশে সব থেকে বেশি নীলচাষ হয়। ১৮৫৯-৬০ সালের নীল বিদ্রোহের দরম্নন নীলচাষ হ্রাস পায় ক্রমান্বয়ে। পরে পুরোপুরি শেষ হয়ে যায় এর চাষ। যশোরে মি. বন্ড যখন নীলকুঠি স্থাপন করেন, তখন কোম্পানি শাসন পাকাপোক্ত। বিভিন্ন স্থানে রাজস্ব আদায় ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নতুন নতুন জেলা ও থানা স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যশোরে ১৭৮১ সালে নতুন জেলা স্থাপিত হয়েছে। যার সদর দফতর বসেছে মুড়লীতে। রূপদিয়া থেকে যশোর শহরে আসার পথেই মুড়লী। ১৭৯৫ সালে যশোরে কালেক্টরেট ছিলেন থমাস পোনে। মি. বন্ড ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। তাঁরই পরামর্শে মি. বন্ড রূপদিয়াতে কুঠি স্থাপন করেন। ভৈরব নদের ঠিক দক্ষিণ প্রানত্মে জঙ্গল কেটে তৈরি হয় বিশাল এলাকা নিয়ে নতুন নতুন ভবন। এলাকাটি ছিল পুরোপুরি জঙ্গলাকীর্ণ। জনবসতি ছিল বিরল। বনে বাঘও থাকত। রূপদিয়া সরাসরি নদীপথে মুড়লীর সঙ্গে সংযুক্ত। অন্যদিকে পূর্বদিকে শেখহাটি, অভয়নগর, ফুলতলা, নয়াবাদ (খুলনা) পর্যনত্মও যাওয়া যায় সহজে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস